ঝরঝরি ঝর্ণা

 ঢাকা থেকে কাছের দুরুত্তে অবস্থিত এবং একদিনে গিয়ে ঘুরে আসা যায় এমন একটি  জায়গা হচ্ছে  সীতাকুণ্ড।এইখানে ছড়িয়ে  ছিটিয়ে  আছে নাম না জানা অনেক ঝর্না  পাহাড়  আর  দর্শনীয় স্থান । আমাদের সীতাকুণ্ড অভিযানে  
আমরা আপনাদের ঘুরতে নিয়ে যাব ঝরঝরি
ট্রেইলে । 


যেহেতু ভ্রমণটি ১ দিনের  আমাদের প্ল্যান ছিল রাতের বাসে সীতাকুণ্ড যাবো পরেরদিন সীতাকুণ্ড ঘুরে আবার রাতের বাস ধরে ঢাকায় ফিরবো । ঢাকা থেকে সরাসরি চট্টগ্রামের বাস ধরে সীতাকুণ্ড যাওয়া যায় কিন্তু সমস্যা হলো ঢাকা থেকে সরাসরি চট্টগ্রামের বাস ভাড়া ৪৮০ টাকা । কিন্তু আমাদের ট্যুরটি ছিলো বাজেট ট্যুর তাই খরচ কমাতে চাচ্ছিলাম । খরচ কমাতে অবশ্য মেইল ট্রেনে সীতাকুণ্ড যাওয়া যায় কিন্তু মেইল ট্রেনের অভিজ্ঞতা খুব খারাপ কারন মেইল ট্রেনে সারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে যেতে হয় । তাই যদিও মাত্র ১২০ টাকা দিয়ে মেইল ট্রেনে সীতাকুণ্ড যাওয়া যায় কষ্টের কথা চিন্তা করে মেইল ট্রেনে যাওয়ার সাহস হল না । খরচ কমানোর জন্য নতুন প্ল্যান করলাম আমারা প্রথমে ঢাকা থেকে ফেনী যাবো । কারন ঢাকা উত্তরা থেকে ফেনীর বাস ভাড়া মাত্র ৩০০ টাকা আর সায়েদাবাদ থেকে ২৭০ টাকা । আর ফেনী থেকে পন্থিছিলা বাজারের বাস ভাড়া ৫০ টাকা সুতারাং আসা যাওয়া বাবধ আমাদের সেভ হবে প্রায় ৩০০ টাকা । যেই কথা সেই কাজ আমরা ঢাকা থেকে ফেনীর বাসে উঠে গেলাম এবং মোটামুটি সকাল ৫ টায়  আমরা ফেনিতে নেমে গেলাম । এবং ফেনিতে নাস্তা  সেরে সকাল ৬টায়  চট্টগ্রামের বাসে উঠে গেলাম । ফেনী থেকে পন্থিছিলা যেতে সময় লেগে ছিলো ১ ঘন্টা । পন্থিছিলা বাজারে এসে সিএনজি ঠিক করলাম রেল লাইনে নামিয়ে দিবে বলে । ভাড়া নিয়েছিলো জনপ্রতি ১০ টাকা করে । যদিও পন্থিছিলা হতে রেল লাইনে হেঁটে যেতে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে আর দূরত্ব মাত্র ১ কিলো মিটার । যেহেতু সারা রাত জার্নি করে ক্লান্ত তাই হাঁটার প্যারাটা নিলাম না । আমরা রেললাইনে এসেই রেল লাইন ধরে হাতের বাম পাশে হাঁটা শুরু করলাম । রেল লাইন ধরে  ৫ মিনিট হেটেই হাতের বামে ১ টা মাটির রাস্তা পেয়ে গেলাম । আমরা যদিও এখনো গাইড ঠিক করা হয়নি রেইল গেটে গাইড ঠিক করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা ১০০০ টাকা চাইল আমরা বললাম ৫০০ দিবো কিন্তু রাজি হলো না । তাই মনে মনে ঠিক করলাম গাইড না নিয়েই চলে যাবো । মাটির রাস্তা ধরে কিছু পথ হাটতেই ইলিয়াস নামের ১ টি ছেলেকে পেয়ে গেলাম যে কিনা ৩০০ টাকা এবং ১ বেলা খাবারের বিনিময়ে আমাদের গাইড হিসাবে কাজ করতে রাজি হলো ।

 

শুরু করলাম গাইডকে নিয়ে হাঁটা ।  রাস্তাটা একধম গ্রামীণ মেঠো পথ বলতে যা বোঝায় সেই রকম আর কিঘাশের চাঁদরে বেচানো রাস্তা আর দুপাশে সবজীর খেত আর দূরে দেখা যাচ্ছে শিতাকুন্ড মিরসরাই রেঞ্জের পাহাড় গুলো । আমাদের দেশ যে কত সুন্দর এখানে না আসলে বুঝবেনই না 

 

দেখতে দেখতে আমরা প্রথম জিরিতে চলে আসলাম এখান থেকেই মুল ট্রেইল শুরু ।

আপনারা দেখতে পাচ্ছেন জিরিতে অনেক ময়লা ফেলে রাখা হয়েছে দেখে মনে হচ্ছে এই কাজ গুলো পর্যটক রাই করেছে কারন এইসব আঁচার আর চিপস এর প্যকেট গ্রামের লোকেরা ফেলার কথা নয় তাছাড়া আসে পাশে কোন বাড়ি ঘরও নেই । আমরা নিজ দাইত্বে ময়লা গুলো কুঁড়িয়ে নিলাম আসা করি আপনারও এই কাজ গুলো করবেন । আর আপনাদের প্রতি অনুরোধ  ভ্রমণে এসে ময়লা ফেলবেন না । পরিবেশ আমাদের এবং এর রক্ষা করার দায়িত্ব ও আমাদের ।

 

আমাদের গাইড বললো জিরি ধরে গেলে সামনে অনেক বড় ১ টা গর্ত রয়েছে তাই হাতের ডান পাশে ১ টা শর্ট কার্ট রাস্তা ধরে যাচ্ছি । আপনারা এখন যে গর্তটা দেখতে পাচ্ছেন এটাই সেই গর্ত যেটা AVOID করার জন্য আমরা বিকল্প পথে এসেছি যদি আমরা গাইড ছাড়া আসতাম তবে হয়তো জানতেই পারতাম না কোনটা সঠিক রাস্তা আর কোনটা ভুল রাস্তা তাই আমাদের সাজেশন থাকবে অবশ্যই গাইড নিয়ে আসার ।

 

আমরা প্রায় ৩০ মিনিট ধরে হাঁটছি কিন্তু বনের ভিতর প্রবেশ করার পর কোন মানুষের দেখা পাইনি ।আর রাস্তা গুলো এতই অগোছানো যে আমাদের গাইড ২ বার ভুল রাস্তায় প্রবেশ করেছিলো কিন্তু তাৎখনাথ বুজতে পরেছিল যে ভুল রাস্তায় যাচ্ছি তাই আবার সে সঠিক রাস্তা খুজে নিয়েছিলো এই জন্যই আপনাদের বলেছি গাইড ছাড়া আসবেন না ।

 

আর আমাদের গাইড থেকে জানতে পারলাম এই ট্রেইলে বানর চিতাবাঘ , মেছো বাঘ , হরিন , বনমোরগ প্রায়ই এই সব বন্য প্রাণী দেখা যায় । পাহাড়ি রাস্তা হাটাটা বেশ কস্টের কাজ কিন্তু রোমাঞ্চ কর । আর আমরা এখন যে পাহাড়ে আছি এখান থেকে সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় খুব স্পট ভাবে দেখা যাচ্ছে ।

 

আপনারা দেখতে পাচ্ছেন শাকিলকে জোঁকে ধরেছে যেহেতু শুরুতেই টের পেয়েছে রক্ত খেতে পারেনি । আর জোঁক দেখে ভয় পাবার কিছু নেই জোঁকে কামড়ালে মানুষ মরে না তবে জোঁক যেন রক্ত খেতে না পারে সেই জন্য বার বার শরীর চেক করে দেখতে হবে যেন শরীরে বসে পড়লেও ধরে ফেলে দিতে পারেন ।

 

আমরা আবার জাত্রা শুরু করলাম আসলে প্রকৃতি যে কত সুন্দর হতে পারে সেটা সীতাকুণ্ড ভ্রমনে না আসলে বুজতে পারবেন না । যতই হাঁটছি চারপাশের সবুজ মনোরম পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হচ্ছি।

 

আমরা আবারো বড় জিরি ফেলে হাতের বাম দিকে ছোট জিরি ধরে যাত্রা সুরু করলাম ।আমরা সাধারানত যেকোনো ট্রেইলে ঘুরতে গেলে বড় ঝিরি পথ ফলো করি । কিন্তু ঝরজরি ট্রেইলে দেখলাম বড় ঝিরি ফলো করা করা হচ্ছে না ।  কাজেই বুজতেই পারছেন গাইড না নিয়ে আসলে  হয়তো আমরা সারাদিন ভুল রাস্তায় ঘুরপাক খেতেই থাকতাম ।

 

এই মুহূর্তে আমরা আরো ১ টা বড় জিরি পেয়ে গেলাম গাইডের ভাষ্য মতে এবার আর আগের মত ছোট রাস্তায় যেতে হবে না । তাই বড় রাস্তা ধরেই যাচ্ছি বন্ধুরা দেখতেই পাচ্ছেন আবারো জোঁকে ধরেছে ।ঝরজরি ট্রেইলে ঘুরবেন আর জোঁকে ধরবে না এটাতো হবে না আপনাদের কে আমরা আগেই বলেছিলাম এই ট্রেইলে প্রচুর জোঁক রয়েছে । হাঁটতে হাটতে ক্লান্ত তাই একটু বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করছি । প্রায় ২ ঘন্টা হাঁটার পর আমরা চলে আসলাম ঝরজরি ঝর্ণায় 

                        

এই ট্রেইলে ছোট বড় মোট ৬টি ঝর্ণা রয়েছে। পন্থিছিলা থেকে সব গুলো ঝর্ণা  দেখে আসতে প্রায় ৫ ঘণ্টার মত লাগবে ঝরজরি ঝর্ণার সবচেয়ে দেখার মত জিনিশ হচ্ছে বিচিত্র সব ক্যাসকেড এবং নিঝুম প্রকৃতি । আর সীতাকুণ্ডের অন্যান্য ট্রেইলের মত পরিচিত না হবার কারনে মানুষ জনের আনাগোনা খুব একটা নেই তাই  নিরিবিলি খুব সুন্দর সময় কাটানোর জন্য আকর্ষণীয় একটি যায়গা হচ্ছে ঝরজরি ট্রেইল । আরো মজার ব্যাপার হলো এই ট্রেইলে ট্রেকিং করার সময় আপনি অনেক কাঁঠাল গাছ, গাব গাছ, লেবু গাছ ও আম গাছ পাবেন। যদি হাতের কাছে পাকা কাঁঠাল, গাব, লেবু, আম পেয়ে যান তাহলে সেখান থেকে নিতে পারবেন কারন সবগুলো গাছই সরকারী

 

সীতাকুণ্ডের যেকোনো ট্রেইলের তুলনায় এই ট্রেইল পরিষ্কার পরিছন্ন তাই আপনাদের প্রতি অনুরোধ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পরিবেশের কথা ভুলে যাবেন না। পরিবেশ নোংরা করবেন না, আবর্জনা যা নিয়ে যাবেন এবং যা পাবেন আসার সময় সাথে করে নিয়ে আসবেন। আপনার ভ্রমণ সুন্দর হোক।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ